,

নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচন ॥ প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে ॥ ভোটারদের মন জয়ে ব্যাস্ত প্রার্থীরা

আলী হাছান লিটন/রিপন দেব ॥ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা বিরামহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাসা-বাড়ি, হাট-বাজার সর্বত্র প্রার্থীদের পদচারণায় নির্বাচনী মাঠ এখন তুঙ্গে। চলছে গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা- সমাবেশ ও উঠান বৈঠক। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এবং তার পক্ষে সর্বাত্মক ভাবে কাজ করতে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সভা সমাবেশ। প্রার্থীরা ভোটারদের শোনাচ্ছেন নানা প্রতিশ্র“তির বাণী। তবে এবার প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ। ভোটাররা জানিয়েছেন প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্র“তি ও মিষ্টি কথায় না ভুলে এবার দেখে শুনে যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে বেছে নেবেন তারা। এদিকে নির্বাচনী পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা পৌর এলাকা। চলছে হ্যান্ডবিল বিতরণ ও মাইকে প্রচারণা। নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৫জন প্রার্থীর পাশাপাশি ৪২ জন কাউন্সিলর ও ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীগণ জয়ের আশায় প্রতিশ্র“তির ডালি সাজিয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট ভিক্ষা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম রানা (জগ), উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব মাহমুদ চৌধুরী (লাঙ্গল), জুবায়ের আহমদ চৌধুরী (মোবাইল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। মেয়র পদে ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভবনা বেশি। নবীগঞ্জ পৌরসভা মোট ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ১শ ৯৫ নব্বই জন। ১নং গন্ধ্যা মদনপুর-মায়ানগর ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ শত ২৯ ভোট। এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদিন, বর্তমান কাউন্সিলর উপজেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জাকির হোসেন। এখানে দ্বিমুখি লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে। ২নং ওসমানী রোড-রাজনগর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৯শ ২৫ জন। এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন নবীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী তাজ ক্লথ ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী আলহাজ্ব হাফেজ মোঃ নিয়ামুল হক, বর্তমান কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মোঃ সুন্দর আলী, সাংবাদিক মোঃ আলমগীর মিয়া, ব্যবসায়ী আব্দুল হাদি, মোঃ আবুল মিয়া। এখানে একই গ্রামের তিন প্রার্থী থাকায় ওসমানী রোডের প্রার্থী বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী হাফেজ নিয়ামুল হক সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে বলে ভোটারদের ধারনা। তবে এ ওয়ার্ডে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভবনাই বেশি। ৩নং মধ্যবাজার ও আনমনু নিয়ে গঠিত। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৭শ ৯৪ জন। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৪ জন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর শাহ রিজভী আহমদ খালেদ, সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আব্দুস সালাম, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ওহি চৌধুরী ও জাপা নেতা মোঃ নুর মিয়া। এখানে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে। ৪নং কেলিকানাইপুর-গয়াহরি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২০ হাজার ৩২ জন। প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২ বারের নির্বাচিত বর্তমান কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ, পৌর আওয়ামীলীগ নেতা প্রানেশ চন্দ্র দেব, শফিকুল ইসলাম, মুক্তার হোসেন, সায়র কুমার দাশ। এখানেও দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে। ৫নং ফিরোজপুর-রাজাবাদ ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৫ শ ৯৫ জন। প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন ২ বারের নির্বাচিত বর্তমান কাউন্সিলর ও নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এটি এম সালাম, পৌর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ লুৎফর রহমান মাখন, মোছা: আছমা বেগম, ও মোঃ ইছমত আলী। এ ওয়ার্ডে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে। ৬নং চরগাঁও-আক্রমপুর ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ শ ১২। এ ওয়ার্ডেই সর্ব্বোচ্চ ৯ জন প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন উপজেলা বিএনপি’র যুব বিষয়ক সম্পাদক নুরুল গনি চৌধুরী সোহেল, পৌর যুবদলের সাবেক আহবায়ক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রিপন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জায়েদ চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শেখ আবুল কাশেম, পৌর স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী মিতু, উপজেলা শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি মোঃ আজিল মিয়া চৌধুরী, ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আঃ আহাদ চৌধুরী, রথীন্দ্র মালাকার, জয়নাল আবেদিন। এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী মেয়র পদে নির্বাচন করার কারণে এ মুহুর্তে কে বিজয়ী হবে এ ব্যাপারে ভোটারদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ভোটারদের ধারনা এ ওয়ার্ডে ৪র্থ মুখি প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৭নং আনমনু, সালামতপুর ও নহরপুর ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৮ শত ৮৬ জন। এখানে প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ২ জন। তারা বর্তমান কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন রফু ও মোঃ কবির মিয়া। এ ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর মধ্যেই তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৮নং শিবপাশা মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৮শ ৭৮ জন। প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। তারা হলেন সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র এবং নবীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাবুল চন্দ্র দাশ, তরুন প্রজন্মের নেতা তপন জ্যোতি দে, বর্তমান কাউন্সিলর সন্তোষ দাশ এবং মোঃ আলমগীর হোসেন চৌধুরী। গত পৌরসভা নির্বাচনে এ ওয়ার্ডে বাবুল দাশ সামান্য কয়েক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে এবার তিনি তার হারানো পদ ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভবনাই বেশি। ৯নং পূর্ব তিমিরপুর ও জয়নগর মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৮ শত ৪৪ ভোট। প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শেখ শাহনুর আলম ছানু, পৌর যুবলীগের সভাপতি ফজল আহমদ চৌধুরী, পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নকুল মিয়া তালুকদার, মোঃ লিল খাঁ। ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায় এখানে আওয়ামীলীগের ৩ প্রার্থী থাকায় ক্লিন ইমেজের অধিকারী বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন এর উন্নয়ন মূলক অবদান বেশি থাকায় তার ভোটের পাল্লাই ভারী। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী- ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জাকিয়া আক্তার লাকি, ফারজানা আক্তার পারুল প্রার্থী রয়েছেন। এখানে ২ জনের মধ্যেই প্রতিদ্বন্ধীতা হবে। ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ২ বারের নির্বাচিত বর্তমান কাউন্সিলর যুতিকা রাণী দাশ, পূর্নিমা রাণী দাশ, রোকেয়া বেগম, সামারুন বেগম প্রার্থী রয়েছেন। এ ওয়ার্ডে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে শেলি বেগম, সৈয়দা নাসিমা বেগম, ফুলন সুত্রধর প্রার্থী রয়েছেন। এখানে ত্রিমুর্খী প্রতিদ্বন্ধিতা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর